Friday, November 25, 2011

একটা কাক!

যদিও বৃহস্পতিবার, তারপরও বাসায় ছিলাম। ঘুম ভাঙল সোয়া ১১টায়। ঘুম ভেঙ্গে মোবাইলের দিকে চোখ যেতেই দেখলাম দুইটা রিমাইন্ডার। একটা জরুরী ফোন করার দরকার ছিল ১১টায়। তাড়াতাড়ি উঠে ফোন করলাম। কথা বলতে বলতে গেলাম বারান্দায়। আমার অভ্যাস হাঁটতে হাঁটতে কথা বলা। 

কথা বলা শেষ করে রাস্তার দিকে তাকাতেই দেখলাম আমাদের বাসার সামনে গেটের ভিতরে এলাকার কিছু পোলাপান হৈচৈ করছে। তাকিয়ে দেখলাম একটা কাক বসে আছে, আর সব পিচ্চিগুলা ওইটাকে ঘিরে আছে। একজন দেখি লাঠি নিয়ে এসেছে খোঁচাখুঁচি করবে মনে হয়। আমি দিলাম এক ধমক। সব পিচ্চি দৌড়। কাকটি তারপরও বসে আছে। উড়ে যাচ্ছে না।

নিচে নামলাম। দেখি কাকটা আহত। একটা পা আর সম্ভবত গলা। উড়তে চেয়েও পারছে না। আমি কাকটাকে একটু সাইডে নিয়ে গেলাম। একটা কোনে থাকার জায়গা দিলাম যাতে আর কেউ খোঁচাখুঁচি করতে না আসে। পানি দিলাম। একটু একটু করে অনেকখানি পানি খেয়ে ফেলল। বুঝলাম ক্ষুধার্ত ছিল। খাবার দিলাম, তেমন একটা খেল না। কিন্তু বারবার পানি খাচ্ছে। আমি ওই অবস্থায় রেখে চলে আসলাম।

একটু পর দেখি কয়েকটা কাক একসাথে ডাকাডাকি করছে। বারান্দায় গিয়ে দেখি তিন চারটা কাক এসে এসে দেখে যাচ্ছে  আহত কাকটিকে। এর মধ্যে একটা কাক উপরে তারে বসে মুখে করে খাবার এনে নিচে বসা কাকটির দিকে ফেলছে। মানে কাকগুলো তাদের আহত বন্ধুকে অথবা পরিবারের সদস্যকে সেবা করছে।

আমি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ভালো লাগল। 

চড়ুই বিপত্তি (ফলো-আপ)

সেপ্টেম্বর ২২, ২০১০ তারিখে লেখা আমার একটা ব্লগে আমি একবার চড়ুইয়ের কাহিনী উল্ল্যেখ করেছিলাম (লিঙ্কটা দিয়ে দিলাম- http://diary-rezwan.blogspot.com/2010/09/blog-post_22.html)। তারই ফলোআপ হিসেবে এই পোস্ট।

আজ (বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২৪, ২০১১) বিকেলে খেয়াল করলাম আমার বারান্দায় আবারো চড়ুইয়ের আনাগোনা শুরু হয়েছে। কিচির মিচির শুনতে আমার ভালোই লাগে। আমার খুব ভালো লাগল যে এরা আবার ফিরে এসেছে। কিছুক্ষণ পর দেখলাম এরা আমার গাছে চড়ে বারান্দায় ঢোকার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি দাঁড়িয়ে থাকায় ভিতরে আসছে না। তাই আমি ভিতরে চলে গেলাম, আর লুকিয়ে ওদের কান্ড দেখতে লাগলাম।

আমি দেখলাম, প্রায় বছর খানেক আগে আমার গাছ বাঁচানোর জন্য আমি চড়ুইয়ের যেই বাসাটা ঝুলিয়ে ছিলাম, তাতে বসে আছে এক চড়ুই। আর আরেকটা বসে আছে আমার গাছের ডালে। দেখে ভালো লাগল। আমার এতদিনের শখ ছিল যে খাঁচায় বন্দি না করে কিভাবে পাখি পোষা যায়, আমার মনে হয় সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।

আমি খাবার দিলাম। ওরা সেই খাবার খুটিয়ে খেল। তারপর কিচির মিচির করতে করতে বাসায় ঢুকে গেল।

আহ! শান্তি! দেখে ভালো লাগল! আর তাই এই ফলোআপ পোস্টটা লিখলাম। 

Monday, August 22, 2011

পরীক্ষা এবং তেলাপোকা!

টাইটেল দেখে মনে হতে পারে আমি পাগল হয়ে গেছি। কিন্তু না, আমি পাগল হইনি। একটা ঘটনা শেয়ার করতে চাই। শুনলেই বুঝবেন কি বলতে চাচ্ছি।

এই বছর ভয়াবহ গরম পড়েছে। গরমের সাথে আছে চরম বৃষ্টি। আর এখনতো বর্ষাকাল। তাই প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। আর খুবই স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে ছোট ছোট পোকা-মাকড়ের উৎপাত। আমাদের বাসাতেও একই অবস্থা। বেশ কিছুদিন ধরেই আমরা অনুভব করলাম বাসায় তেলাপোকার উৎপাত একটু বেশিই বেড়েছে। তাই প্রতিদিনই তেলাপোকা মারার ওষুধ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারপরও উৎপাত কমছে না।

এমতাবস্থায় আমার আম্মু অনেক চিন্তা করে খুঁজে বের করল যে আমার বোনের পরীক্ষা শেষ হওয়ার কারণেই তেলাপোকাগুলো মারা যাচ্ছে না। আমি অবাক হলাম। জিজ্ঞেস করলাম, মানে কি? আম্মুর অভিমত হচ্ছে, আমার বোনের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তার এখন কোন কাজ নেই। তাই সে রাত জেগে থাকে। সে রাত জাগলে ঘরের লাইট জ্বালানো থাকে। আর ঘরের লাইট জ্বালানো থাকলে তেলাপোকাগুলো বের হয় না। আর তেলাপোকাগুলো যদি না বের হয় তাহলে তেলাপোকার ওষুধে কিভাবে কাজ হবে!

আমি অবাক হয়েই বলতে বাধ্য হলাম, কথায় যুক্তি আছে। 

Tuesday, April 19, 2011

Ethics বলে কি আদৌ Marketing-এ কিছু আছে?


এইখানে আসলে Ethics বলতে কি হবে? বিভিন্ন অবস্থা, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আসলে Ethics-এর ব্যাখ্যা আলাদা। আমি মার্কেটিং-এ চাকরী করি, আমার পড়ালেখাও একই ধারায়। পড়ার সময় তো আমরা কত কিছুই পড়ি। পড়ার সময় মার্কেটিং-এর বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে একটা পেয়েছিলাম “Marketing  Ethics”। সেখানে পাঠ্য অনেক কিছুই ছিল। কিন্তু তাতে কি! বাস্তব আর পড়ালেখার মধ্যে অনেক তফাত!

কিন্তু তাই বলে কি বাস্তবে আসলেই মার্কেটিং-এ কোন Ethics নেই? হ্যাঁ অথবা না, এইটা ঢালাওভাবে বলে দেয়া যায় না। তবে এইটুকু বলতে পারি, মার্কেটিং-এ কোন কিছুই স্থির (permanent) নয়! আজকে যদি কোন বিষয়ের একটা ব্যাখ্যা হয়, কালকেই সেটা বদলে যেতে পারে। আসলে মার্কেটিং সময়ের সাথে আর অবস্থার সাথে পরিবর্তন হয়ে যায়। সম্পুর্ণ বই পড়ে মার্কেটিং জানা যায় না।


একটা ঘটনা বলি।

সেইদিন অফিসের মিটিংয়ে বসে আছি। বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা চলছে। এর মধ্যে একটা ইস্যু উঠল, আমাদের সিমেন্টের নতুন একটা “অটো-সিস্টেম ঘাট” হবে মিরপুরে। কিন্তু বিগত কিছু সময় যাবত কোন এক টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে এর উদ্বোধন সময় পিছিয়ে যাচ্ছে।  এই অবস্থায় আমাদের ডি.এম.ডি স্যার মিটিংয়ে নির্দেশ দিলেন, “তোমরা ঘাটের সাথে কথা বলে একটা ডেট (সময়) ফিক্স কর। তারপর মিলাদ দাও।” সবাই কিছু সময় চুপ থাকলেন। তারপর বুঝতে পারলেন আসল ঘটনা। এবার সবাই খুশি। সাথে সাথে ঘাটে ফোন করে মিলাদের সময় ঠিক করে ফেললেন।

আমি ব্যাপারটা ঠিক ধরতে না পারায় আমার সাথে বসা একজন রিজিওনাল ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা স্যার ব্যাপারটা কি ঘটল? তিনি আমাকে ব্যাখ্যা করলেন। এবং এর সাথে এটাও বললেন, শুধু “কটলার” (Philip Kotler)-এর বই পড়ে মার্কেটিং শেখা যায় না।  Experience বলে একটা ব্যাপার আছে।

(আপনাদের সুবিধার জন্য আমি ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করে দিচ্ছি)
হেড অফিস থেকে যখন মিলাদ-মাহ্‌ফিল আয়োজনের কথা বলা হয়, স্বাভাবিকভাবেই ঘাটে তখন কাজের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। এতদিন আলোচনা করেও যখন কাজ শেষ করা যাচ্ছিল না, সেই মুহুর্তে মিলাদ-মাহ্‌ফিলের কথা মানে হচ্ছে, কোম্পানী চাচ্ছে ওইদিন কাজটার উদ্বোধন হবে। আর যেভাবেই হোক ঘাট কাজটা শেষ করার জন্য উঠে-পড়ে লাগবে। একই সাথে সাপও মরবে আর লাঠিও ভাঙ্গবে না। 

যাই হোক, Ethics নিয়ে কথা বলছিলাম। কিন্তু কি বলব, কিছুই বলার নাই। আগের একটা পোস্টে বলেছি যে, আমার চাকরীর বয়স মাত্র এক বছর। গত এক বছরে আমি অনেক কিছু শিখেছি, এখনো শিখছি আর আরো অনেক কিছু শেখার আছে। এই জায়গাটায় একটা জোকস্‌ বলতে ইচ্ছা করছে, "জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই"!  হা হা হা ... 

-রেজওয়ান
যোগাযোগ- rezwaneye2000@gmail.com

Wednesday, March 30, 2011

রাস্তায় একটা রিকসাও নেই!



"কি আশ্চর্য কথা! রাস্তায় একটা রিকসাও নেই!"
"না নাই।"
"এইটা কোন কথা হল!"

বলেই আমি বেরিয়ে গেলাম বাসা থেকে। এমনিতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে অফিসের জন্য, তার উপর যদি রিকসা না পাই তাহলে কিভাবে হবে? দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে পৌঁছলাম মেইন রোডে। আমার বাসা থেকে মেইন রোডের রিকসা ভাড়া ১০ টাকা। আমি হেঁটেই চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি আমার মত আরো অনেক হতভাগা মাথায় হাত দিয়ে (কথার কথা) দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়। কোন রকম একটা রিকসা পেয়ে গেলাম, আর উঠে পড়লাম। এক্কেবারে "ইলেভেন্থ আওয়ার" যাকে বলে, সেই সময়ে অফিসে পৌঁছলাম। শান্তি! কিন্তু আসলে হচ্ছে কি?

কিছুক্ষণ পর পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। রিকসা ধর্মঘট হল এর কারণ।



কিছুদিন আগে (কোন এক শনিবার) অফিস থেকে বেরিয়েছি, যাব ইউনিভার্সিটি। রিকসা ঠিক করতে গিয়ে পড়লাম বিপদে। কেউ যাবে না ইউনিভার্সিটি। কেন?

"স্যার, রাস্তা বন্ধ কইরা দিছে। পেরেস কেলাব দিয়া আর যাইতে দেয় না।"
"কোন মিটিং আছে নাকি!"
"জানি না, যাইতে দেয় না। কয় রাস্তা বন্ধ কইরা দিব। গুলিস্তান দিয়া ঘুইরা যাওয়া লাগব।"
"কবে থেকে হল এইটা?"
"এইত আইজকা।"

ভাবলাম, কি আর হবে! হেঁটেই চলে ইউনিভার্সিটি। গেলামও তাই। তবে আসলে পরে বুঝলাম এর পরিণতি কি হয়েছে।

রাতে বাসায় এসে শুনি, আমার বোনের খুব মেজাজ খারাপ। ইউনিভার্সিটি যেতে তাকে অনেক ঘুরে ঘুরে যেতে হয়েছে। আসার সময় কোন রিকসা আসতে রাজি হয়নি। কিছুদূর হাঁটতে হয়েছে। কারণ হচ্ছে এই রাস্তা বন্ধ।

"কতখানি ঘুরতে হয়েছে?"
মালিবাগ মোড় থেকে সাধারণত ঢাকা ইউনিভার্সিটি যাবার রাস্তা হচ্ছে, মালিবাগ মোড় - শান্তিনগর - কাকরাইল - সেগুনবাগিচা - প্রেসক্লাব - হাইকোর্ট - দোয়েল চত্বর হয়ে টি.এস.সি মোড়।

কিন্তু ওইদিন রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে তাকে ঘুরতে হয়েছে-
মালিবাগ মোড়  - শান্তিনগর - কাকরাইল - বিজয়নগর - জিরো পয়েন্ট - গুলিস্তান - পুরান ঢাকা - বঙ্গবাজার - ঢাকা মেডিক্যাল - শহীদ মিনার - টি.এস.সি মোড়।


আর অফিসে যাবার দিন যা রিকসার ধর্মঘট ছিল। কারণ হচ্ছে- মালিবাগ মোড় থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত, মালিবাগ থেকে রামপুরা রোড এবং মালিবাগ থেকে মগবাজার হয়ে কাকরাইল পর্যন্ত রাস্তায় রিকসা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। কেন? কেউ জানে না।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত আরোপ করা হয়েছে, যা গতকালের (২৮ মার্চ ২০১১) ধর্মঘট ও রিকসা চালকদের ভাংচুর সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত কোন অপরিবর্তিত আছে। এই রাস্তাগুলোকে হঠাৎ করেই কেন "ভি.আই.পি" রোড করা হল? নাকি জ্যাম কমানোর জন্যই এটা করা হয়েছে? কেউ জানে না।



আমার কথা হচ্ছে, জ্যাম কমানোর জন্য যদি এই সিন্ধান্ত নেয়া হয়, তাহলে ব্যাপারটা খুব বেশি ভালো হয় নি। রাস্তা শুধুমাত্র এক গ্রুপের (যাদের গাড়ী আছে) চলাচলের জন্য নয়। রাস্তা সবার জন্য। এইটা আমাদের দূর্ভাগ্য যে আমাদের শহরে রাস্তা কম, মানুষ বেশি। তাই বলে কি মানুষ রাস্তায় চলাচল করবে না? তাদের চলাচলের একটা বাহন তো দিতে হবে।

এই মুহুর্তে ঢাকা শহরে যে পরিমাণ মানুষ বাস করে তাদের চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক গণপরিবহন নেই। কিছু সংখ্যক রুটে বাস চলাচল করে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। বেশিরভাগ অফিসগামী, বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিগামী ছেলে-মেয়েদের জন্য রিকসা একমাত্র ভরসা। যাদের এখন মাথায় হাত!

আমি এখানে সরাসরি রিকসার সাপোর্টে অথবা বিপক্ষেও কিছু বলছি না। আমি কথা বলছি গণপরিবহন নিয়ে। যেখানে এতসংখ্যক মানুষ (সঠিক পরিসংখ্যান আমার জানা নাই) যে বাহন ব্যবহারে নিত্য কাজ সম্পাদন করে, তাদের কাছ থেকে কেন বাহনটি ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে? তাদের জন্য কি কোন বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে? হয়ে থাকলে সেটা কেন তাদের জানানো হয় নি?



একটা নিয়ম বানানো খুবই সহজ। কিন্তু সেটার বাস্তবায়নে দেখা যায় যত ঝামেলা। যে কারণেই আমাদের দেশে বেশিরভাগ ব্যাপারে আইন আছে কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। একটা নিয়ম করার সময় এটার সাথে যাদের ভাগ্য জড়িত তাদের সাথে কোনরকম আলোচনা ছাড়াই এই নিয়ম কেন করা হল?

রাস্তায় সবাই চলাচল করবে। শুধু যদি চার চাকার বাহন চলাচল করে, তাহলে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন পর্যাপ্ত সংখ্যক চার চাকার বাহন গনমানুষের জন্যও থাকে। আমি কথা বলছি পাবলিক ট্রান্সপোর্টের, মানে বাস অথবা ট্যাক্সি, সি.এন.জি.।

জ্যামের দোহাই দিয়ে রাস্তায় চলাচল বন্ধ করা তো কোন সমাধান হতে পারে না। বরঞ্চ আমাদের দেখতে হবে কিভাবে আমরা আমাদের রাস্তাগুলো পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারি এবং নতুন নতুন রাস্তা করতে পারি।

- রেজওয়ান
যোগাযোগঃ rezwaneye2000@gmail.com

Thursday, February 24, 2011

এইটা কি হইল?

আমি সাধারণত ট্রাফিক সিগন্যালে ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দেই না। কারণ আমি জানি যে ঢাকায় এই ধরণের "হট স্পট" নিয়ে কি ব্যবসা হয়। এই স্পটগুলো চড়া দামে ভাড়া হয় এবং কিছু ব্যবসায়ী তা ভাড়া নেয়। তারা সেখানে কিছু ভিক্ষুক নিয়োগ দেয় এবং নিজ গাড়ী বা বাহনযোগে তাদেরকে নির্ধারিত স্থানে নামিয়ে দেয়া হয়। ভিক্ষুকেরা সারাদিন ভিক্ষা করে যা উপার্জন করে তার একটা ভাগ চলে যায় ওইসব ব্যবসায়ীর হাতে। এইটা খুবই প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যবসা। সবাই জানে, কিন্তু কেউ কিছু বলে না। কারণ অনেক বড় বড় "দানব" এর সাথে জড়িত। এর প্রভাব এত বিস্তার করেছে যে, ঢাকার বাইরে থেকে অনেক সময় মানুষ ধরে এনে তাদেরকে জোরপূর্বক পঙ্গু করে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়। এইসব নিয়ে পত্রিকাতেও কম লেখালেখি হয় নাই। তাই আমি সবসময় ট্রাফিক সিগন্যালে ভিক্ষা দেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখি। কারণ এরা তো ব্যবসা করছে, ভিক্ষা না।

কিন্তু আজ সকালে যখন অফিসের দিকে আসছি, তখন রাজারবাগ মোড়ে সিগন্যালে রিকসা দাঁড়াল। কিছুক্ষন পর একটা ভিক্ষুক দেখে আমার আসলেই মনে হল যে একে ভিক্ষা দেয়া যায়। সেই ভিক্ষুকটা আমার সামনের রিকসায় ভিক্ষা করছিল। আমি আগের সব কথা ভুলে গিয়ে যেই ভিক্ষা দেয়ার জন্য মানিব্যাগে হাত দিতে যাব, অমনি দেখি ভিক্ষুকটা আমার দিকে না এসে আমার পেছনে দাঁড়ানো গাড়িটির দিকে ছুটে গেল। আমি হতভম্ব! আমার বলার কিছুই রইল না।

-রেজওয়ান
যোগাযোগঃ rezwaneye2000@gmail.com

Wednesday, February 16, 2011

ছিনতাইকারীর বুদ্ধি!

১৫ই ফেব্রুয়ারী, ২০১১
অফিস থেকে একটু আরলি বের হয়েছিলাম। স্যার তো ছুটিতে ছিলেন, আর তেমন কোন কাজ না থাকায় ৫-৩০ তেই অফিস থেকে বের হয়ে যাই। এখানে বলা বাহুল্য যে, আমার অফিস সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা এবং সরকারি ছুটির দিনেও। যাই হোক, অফিসের সামনে রিকসা না পাওয়ায় একটু হেঁটে গেলাম সামনের দিকে। দিলকুশা মোড় থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত হাঁটতে হল। সেখানে গিয়ে রাস্তা পার হবার জন্য দাঁড়াতেই হঠাৎ দেখি সামনে দৌঁড়াদৌঁড়ি হৈচৈ। আমি একটু ভয় পেলাম। কারণ গত ২ মাস যাবত মতিঝিলে আমরা কিছুদিন পরপরই মারামারি ঢিলাঢিলি দেখছি। অস্থিতিশীল শেয়ার বাজারের কারণে এই দৃশ্য এখন আমাদের চোখে সয়ে গেছে। কিন্তু কখনও সামনাসামনি পরিনি। পরতেও চাই না। তাই একটু হকচকিয়ে গেলাম।

দেখি, কিছু মানুষ দৌঁড়ে গিয়ে আরেকজনকে ধরার চেষ্টা করছে। বুঝলাম, শেয়ার বাজার না। ছিনতাইকারী। খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তারপরও এতটা সামনে থেকে কখনও দেখিনি, তাই আমিও এগিয়ে গেলাম, দেখি কিছু দেখা যায় কিনা! বাস থেকে একজনের মোবাইল টেনে নিয়ে পালাবার চেষ্টা করছিল। রাস্তায় চলাচলকারী আরও বেশ কিছু লোক দৌঁড়ে গেল তাকে ধরতে। বেচারা ছিনতাইকারী! এবার আর যায় কোথা! অল্প একটু দৌঁড়ে গিয়েই ধরা খেয়ে গেল। বাস থেকে লোকটি ছুটে এল। এসেই তার মোবাইল পেয়ে গেল। সে মোবাইল নিয়ে পুলিশের সাথে কথা বলে চলে গেল।

কিন্তু ছিনতাইকারী! সে কোথায়? লোকজনকে মারতে দেখা যাচ্ছে না কেন?

ঘটনার আরও কাছাকাছি গেলাম। দেখলাম সবাই হাসাহাসি করছে। আর প্রশংসা করছে ছিনতাকারীর বুদ্ধির! ছিনতাইকারী পালিয়েছে! পালাই নি, বরং লোকজনই ছেড়ে দিয়েছে! কারণ ধরা খাওয়ার সাথে সাথে ছিনতাইকারী একটা খোলা ড্রেনের ভিতর লাফ দেয়। ড্রেনের পানি গায়ে মেখে একাকার করে ফেলে। এবার তাকে আর কে ধরে! যার মোবাইল, সে তো মোবাইল নিয়ে চলে গেছে। ছিনতাইকারী এবার প্রথমে হেঁটে, পরে দৌঁড়ে পালিয়েছে।

রেজওয়ান
যোগাযোগ- rezwaneye2000@gmail.com

Monday, February 14, 2011

শেয়ার বাজার!

"গতকাল সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে বড় ধরনের দরপতন ও বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভের পর আজও ডিএসইতে দ্রুত গতিতে কমছে সাধারণ মূল্যসূচক। লেনদেনের শুরুর সাত মিনিটের দিকে সাধারণ সূচক ৩৩৩ পয়েন্ট কমে যায়। এর পরও দ্রুত কমতে থাকে সাধারণ সূচক। বেলা সোয়া দুইটার দিকে সাধারণ সূচক ৪৫৭ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ৫৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। প্রায় দুই মাস ধরে সূচক পতনের ফলে ডিএসইতে সাধারণ সূচক ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গেছে। এতে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসে। এ সময়ে মোট ২৪৭ টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে বেড়েছে দুইটির ও কমেছে ২৪৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। মোট লেনদেন হয়েছে ৫৯৩ কোটি টাকার।"


প্রথম আলো, অনলাইন প্রতিবেদক, ১৪-০২-২০১১
সুত্র : http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-02-14/news/131410



বিগত দুই মাসের মুল্য পতনের ধারা অব্যাহত রেখে আজও শেয়ার বাজারে মুল্য সূচক কমেছে ৩৩৩ পয়েন্ট। লেনদেন শুরু হবার মাত্র সাত মিনিটের মাথায়ই ঘটে এই ঘটনা, যা বিগত দুই মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে ৬০০০ পয়েন্টের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই নেমে আসছে সূচক আর রাস্তায় নামছে বিক্ষুদ্ধ বিনিয়োগকারীরা। তারা করছে ভাংচূর, জ্বালাচ্ছে আগুন, দিচ্ছে শ্লোগান মিছিল।

এই হচ্ছে বর্তমানে শেয়ার বাজারের অবস্থা।

এই অবস্থা সম্পর্কে দেশের সর্বোচ্চ পদাধিকারী দুজন মানুষের বক্তব্য শুনলে হিমশিম খেতে হয়। আমি বলছি দেশের প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কথা। তারা লাগাতার এই দরপতনের কারণ হিসেবে যে ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছেন, তাতে তাদের অজ্ঞতাই ফুটে উঠছে। অর্থমন্ত্রীর ক্রমাগত আশ্বাসের পরে বিনিয়োগকারীরা যখনই শেয়ার বাজারের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকায়, তখনই আবার তারা মুল্য পতনের ফলে ধরাশায়ী হয়ে ফেরত আসে। তার মতে, বিনিয়োগকারীদের অজ্ঞতাই এই পতনের মূল কারণ।

আর রয়েছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তার মতে, দেশের বর্তমান এই অবস্থার জন্য দেশের বিরোধী দল দায়ী। তার মতে, বিরোধি দল শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, তারাই দেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী, তারাই আড়িয়াল বিলে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্য দায়ী। প্রধানমন্ত্রী পারলে এটাই বলে দেন যে, দেশের সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ভুমিকম্পের জন্যও বিরোধী দলই দায়ী। তাই-ই যদি হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটা প্রশ্ন, বিরোধী দল ক্ষমতায় না থেকেই যদি এত কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, আপনারা ক্ষমতায় বসে কি তাহলে ভে*** ভাজছেন?

এখানে বলা বাহুল্য যে, আমি কোন রাজনৈতিক দল করি না, অথবা কারও সমর্থনও করি না। আমি একজন সাধারণ জনগণ হিসেবে যে সরকার দেশের জনগণের জন্য ভালো কাজ করবে তার সমর্থন করি। কিন্তু একটা দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা আরও সংযত ও জ্ঞ্যানগর্ভ কিছু বক্তব্য আশা করি। তাদের দুই দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা এবং মনমালিন্য থাকবেই। তাই বলে প্রধানমন্ত্রী এইসব বিষয়ে এই ধরনের মন্তব্য না করলেই পারেন। এইসব কথা বলার জন্য তার দলের অন্য সদস্য আছেন, যাদের মুখে এইসব কথা মানায়; ওনার মুখে নয়।

রেজওয়ান
যোগাযোগ - rezwaneye2000@gmail.com

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১১!

আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের বিষয় যে, বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১১-এর আসর আমাদের দেশে বসছে। শুধু তাই নয়, এর উদ্বোধনী অনুষ্টানের আয়োজক স্বাগতিক বাংলাদেশ। জাতি হিসেবে আজ আমরা গর্বিত। আমাদের এই আনন্দের আজ সীমা নেই।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট-এর এই আয়োজন সফল করতে বাংলাদেশের প্রস্তুতির শেষ নেই। অনেক জল্পনা-কল্পনার পর ঢাকাকে তার পরিপূর্ণ রুপ মাধুরী ফিরিয়ে দিতে আয়োজকদের চেষ্টার কমতি নেই। ঢাকার দুটি স্টেডিয়াম (বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ও শেরে-এ-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম)-কে মেরামত করে সাজানো হয়েছে নতুন জৌলুসে। স্টেডিয়াম ও সংলগ্ন এলাকায় পড়েছে সাজ সাজ রব। সব কিছুতে রঙের ছোঁয়া লেগেছে।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অতিথিদের চলাচলের রাস্তার দুই ধারের কোন বাড়ি পুরনো রঙ-চটা অবস্থায় থাকতে পারবে না। সবাইকে বাড়ি রঙ করতে হবে। বিশেষ করে স্টেডিয়াম ও সংলগ্ন এলাকায়। রাস্তায় গাড়ি চলাচলের ব্যাপারেও রয়েছে কড়াকড়ি। পুরনো গাড়ি রাস্তায় নামতে পারবে না। গণপরিবহনে থাকতে হবে নতুন রঙের ছোঁয়া।

শুধু তা-ই নয়, প্রায় ২-৩ বছর ধরে অবহেলিত ঢাকার রাস্তাঘাট-ও পেয়েছে নতুনত্বের ছোঁয়া। নতুন পিচঢালা পথে লেগেছে নতুন চকচকে সাদা-কালো রোড মার্কিং। ফুটপাত-ও পিছিয়ে নেই এদিক থেকে। তাতেও বসেছে নতুন পেভারস, পেয়েছে রগ্নের ছোঁয়া। বেশিরভাগ রাস্তার ধার থেকে সরে গেছে হকার। রাস্তায় রাস্তায় ঝুলছে না কোন কেবল (তার)। সব মিলিয়ে একেবারে অচেনা এক ঢাকা।

হতেই হবে! বিশ্বকাপ ক্রিকেট-এর মত এইরকম একটা আন্তর্জাতিক মানের আয়োজন সফল করতে আয়োজকদের কাছ থেকে এইটুকুতো আশা করাই যায়। এর উপর আবার এর সাথে আমাদের দেশের ইমেজ জড়িত। সব কিছু মিলিয়ে এইবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেট-এর আমাদের আয়োজন নিয়ে সবাই খুশি।

--------------------------------------------------------------------------------------------------

কিন্তু আমি আসলে এই ব্যাপারে কোন কথা বলতে চাই না। আমি বলতে চাই এর পরবর্তিতে আমাদের অবস্থা কি হবে, তা নিয়ে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট-এর আয়োজন মাস-দুয়েকের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এরপর কি ঢাকা আবার তার পুরনো চেহারায় ফিরে যাবে? সে কি আবারও তার রুপ-জৌলুস হারাবে? কিছু জিনিস হয়ত এমনই থেকে যাবে। যেমন রাস্তায় হয়ত আর তারের (কেবল) জাল দেখা যাবে না। কিন্তু রাস্তায় রাস্তায় আবার হকারদের উৎপাত বেড়ে যাবে, আবার দেখা যাবে রংচটা পুরনো বাস, দেখা যাবে দেয়ালে দেয়ালে অবাঞ্ছিত পোস্টার। বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষ্য নেয়া সব পদক্ষেপ ভেস্তে যাবে তখন। এখনকার মত পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাটও তখন দেখা যাবে না। কিন্তু কেন?

আমরা যদি এত কম সময়ের মধ্যে একটা আয়োজন সফল করার জন্য ঢাকায় এত আমূল পরিবর্তন আনতে পারি, তাহলে কেন আমরা সেটা সারা বছর ধরে রাখতে পারি না? আমাদের কি লোকবলের অভাব? না! আমাদের সদিচ্ছার অভাব।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষ্যে আয়োজকদের আয়োজন অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি চাই যেন পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়ার এই উদ্যোগ সব সময় অব্যাহত থাকে।


রেজওয়ান
যোগাযোগ - rezwaneye2000@gmail.com