Wednesday, September 22, 2010

চড়ুই-বিপত্তি !!!

সাত-সকালে একি বিপত্তি! হথাৎ করেই মাথায় ঢুকল, “চড়ুই পাখি”-র ইংলিশ শব্দটা যেন কি? আমার এই মুহুর্তেই জানা লাগবে এই ইংরেজীটা, নাহলে সারাক্ষণ আমার মাথায় ঘুরতে থাকবে…

ঝামেলা এড়ানোর জন্য গেলাম এক স্যার-এর কাছে। যেহেতু আমি অফিসে, তাই স্যার-এর সাহায্য নিতে গেলাম। আমার প্রশ্ন শুনে স্যারের মনে পড়ল তার ছেলের কথা। তিনি বললেন, “আমার ছেলেটা তো এতক্ষণে স্কুলে চলে গেছে, নাহলে আমি তাকে ফোন করে জেনে নিতে পারতাম। কিন্তু এই মুহুর্তে আমার মনে পড়ছে না”।

জিজ্ঞাসা করলাম অন্য কলিগদের, কিন্তু কারও মনে পড়ছে না যে চড়ুই পাখি ইংরেজী কি? কি বিপদেই না পড়া গেল! এখন আমি কি করি?

তখন একজন বলল, “আপনি বাসায় গিয়ে বাচ্চাদের পশু-পাখি বিষয়ক বইতে দেখতে পারেন। আমি ওইসব বইতে একবার দেখেছিলাম, কিন্তু এখন মনে পড়ছে না”। আর ঠিক তখনই আমার মনে পড়ে গেল একটা শব্দ- sparrow! নিশ্চিন্ত হবার জন্য আমি একটা ইংরেজী-বাংলা অভিধান দেখে নিলাম, এবং নিশ্চিত হলাম!

হয়ত ভাবছেন, একটা পাখির ইংরেজী খোঁজার জন্য এত পাগল হবার কি আছে? আসল কাহিনী তো এইখানেই…

আমার বাগান করার খুব শখ। তেমন একটা জায়গা না পাওয়ায় বারান্দাতেই আমার এই ইচ্ছাটা পূরণ করি। ছোট ছোট গাছ লাগাই, কারণ বড় গাছ লাগানোর মত জায়গা নাই। সাধারণত পাতাবাহার গাছ লাগালেও আমার কাছে বিভিন্ন ধরনের ক্যাকটাস এবং ফুলের গাছ-ও আছে। যাই হোক, সেই বিবরণে আর না যাই।

কিছুদিন যাবৎ একটা উদ্ভট কান্ড ঘটে যাচ্ছে আমার ছোট্ট বাগানে। কে যেন আমার কামিনী গাছের উপর মাটি ঢেলে যাচ্ছে প্রতিদিন! কি আজব কান্ড! আমি প্রতিদিন পাতাগুলো পরিষ্কার করি, আর কে এসে আমার গাছে মাটি ঢেলে দিচ্ছে! আমার বাসা দোতলায়। কার পক্ষে সম্ভব প্রতিদিন আমার গাছে এসে মাটি ঢেলে দিয়ে যাবে? এর কোন সুরাহা আমার বাসার কেউ করতে পারছে না।

একদিন বারান্দার এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আমি দেখতে পেলাম, একটা চড়ুই পাখি বারান্দার অপর প্রান্তে রাখা আমার কামিনী গাছের উপরে ঝুলানো একটা পাতাবাহার গাছের টবে এসে বসেছে। ভালো কথা! আমার বাগানে পাখি এসেছে, দেখে তো ভালো লাগবেই! কিন্তু চড়ুইটা শুধু বসে নেই, সে কিছু একটা করছে। একটু কাছে যেতেই আমি যা দেখলাম তা দেখে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম! একটা চড়ুই কেন এই কাজ করবে?

আমি দেখলাম, চড়ুইটা আমার গাছের টবে বসে তার দুই পা দিয়ে টবের মাটিগুলো সব ফেলে দিচ্ছে! ঠিক যেমনটি করে মুরগি ডিমে তা দেবার জন্য গর্ত খুঁড়ে, তেমনভাবে চড়ুইটা আমার টবে বসে গর্ত করছিল! Strange!

ভাবছেন, আমি মিথ্যা বলছি?
প্রমাণস্বরুপ ছবি তুলে দেখাচ্ছি আপনাদের...
না দেখলে বিশ্বাস করবেন না...
এখন আমি কি করি? ওই জায়গায় যদি আমার টব থাকে তাহলে চড়ুই আবার আসবে। আর টব সরিয়ে আমি অন্য কোথায় রাখব? তারপরও আমি টব সরিয়ে নিলাম। চড়ুই আসাও বন্ধ হল। প্রমাণ, আমার কামিনী গাছের উপর আর কোন মাটি দেখা গেল না।

দিন দশেক পর আমি আবার টবগুলোকে আগের জায়গায় রাখলাম এই ভেবে যে, চড়ুই হয়ত আর আসবে না। আমার ভাবনায় চড়ুই-এর কি যায়! ওই চড়ুই আবার এল। আবার একই কাজ করতে লাগল!

কি ঝামেলায় পড়া গেল! একটা চড়ুই-এর জন্য কি তাহলে আমি বাগান করা বন্ধ করে দিব? নাহ, এ তো মেনে নেয়া যায় না।

আমি আবার টবগুলো সরিয়ে নিলাম। কিন্তু এইবার নতুন আরেকটা জিনিষ রেখে দিলাম, চড়ুই-এর জন্য ছোট্ট একটা বাসা। বাসায় কিছু খাবারও দিয়ে রাখলাম। আমি ভেবেছিলাম চড়ুইটা হয়ত বাসার জন্য জায়গা খুঁজছিল। তাই আমি তাকে একটা বাসা দিয়ে দিলাম। এইবার চড়ুইটা খুশি হবে।

চড়ুইটার জন্য এই বাসাটা ঝুলিয়েছিলাম...
কিন্তু কই? চড়ুই তো আর এল না! আমার বাসাটা খালি পড়ে রইল। এইভাবে প্রায় ১২ দিন যাবার পর যখন চড়ুই আর এল না, তখন আমি আবার টবগুলি আগের জায়গায় রেখে দিলাম। বেচারা চড়ুইটা! একটা বাসা খুঁজছিল হয়ত… মনটা খারাপ হয়ে গেল আমার…

যাই হোক, আমার গাছগুলো আবার বেড়ে উঠতে লাগল। আমি একটা ফুলের গাছের (এই মুহুর্তে নামটা মনে পড়ছে না বলে দুঃখিত) বিচি লাগিয়েছিলাম একটা টবে। তা থেকে সুন্দর একটা চারা বের হচ্ছিল। দেখে খুবি ভালো লাগছিল। কিন্তু একদিন দেখি কে যেন আমার ছোট্ট চারাটা উপড়ে ফেলেছে! ভেবেছিলাম হয়ত বৃষ্টিতে পড়ে গেছে। মন খারাপ লাগছিল…

এরপর আমি আবার সেই গাছের বিচি লাগালাম। ২ দিন না যেতেই আবার দেখি আমার টবের মাটিতে কে যেন গর্ত করে রেখেছে! নিচে কামিনী গাছের উপর আবার মাটি পড়ে আছে! সেই আগের ঘটনা! বুঝতে আর দেরী রইল না যে, চড়ুই পাখিটা ফেরত এসেছে… …




রেজওয়ান
যোগাযোগ - rezwaneye2000@gmail.com

No comments:

Post a Comment