Wednesday, March 30, 2011

রাস্তায় একটা রিকসাও নেই!



"কি আশ্চর্য কথা! রাস্তায় একটা রিকসাও নেই!"
"না নাই।"
"এইটা কোন কথা হল!"

বলেই আমি বেরিয়ে গেলাম বাসা থেকে। এমনিতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে অফিসের জন্য, তার উপর যদি রিকসা না পাই তাহলে কিভাবে হবে? দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে পৌঁছলাম মেইন রোডে। আমার বাসা থেকে মেইন রোডের রিকসা ভাড়া ১০ টাকা। আমি হেঁটেই চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি আমার মত আরো অনেক হতভাগা মাথায় হাত দিয়ে (কথার কথা) দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়। কোন রকম একটা রিকসা পেয়ে গেলাম, আর উঠে পড়লাম। এক্কেবারে "ইলেভেন্থ আওয়ার" যাকে বলে, সেই সময়ে অফিসে পৌঁছলাম। শান্তি! কিন্তু আসলে হচ্ছে কি?

কিছুক্ষণ পর পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। রিকসা ধর্মঘট হল এর কারণ।



কিছুদিন আগে (কোন এক শনিবার) অফিস থেকে বেরিয়েছি, যাব ইউনিভার্সিটি। রিকসা ঠিক করতে গিয়ে পড়লাম বিপদে। কেউ যাবে না ইউনিভার্সিটি। কেন?

"স্যার, রাস্তা বন্ধ কইরা দিছে। পেরেস কেলাব দিয়া আর যাইতে দেয় না।"
"কোন মিটিং আছে নাকি!"
"জানি না, যাইতে দেয় না। কয় রাস্তা বন্ধ কইরা দিব। গুলিস্তান দিয়া ঘুইরা যাওয়া লাগব।"
"কবে থেকে হল এইটা?"
"এইত আইজকা।"

ভাবলাম, কি আর হবে! হেঁটেই চলে ইউনিভার্সিটি। গেলামও তাই। তবে আসলে পরে বুঝলাম এর পরিণতি কি হয়েছে।

রাতে বাসায় এসে শুনি, আমার বোনের খুব মেজাজ খারাপ। ইউনিভার্সিটি যেতে তাকে অনেক ঘুরে ঘুরে যেতে হয়েছে। আসার সময় কোন রিকসা আসতে রাজি হয়নি। কিছুদূর হাঁটতে হয়েছে। কারণ হচ্ছে এই রাস্তা বন্ধ।

"কতখানি ঘুরতে হয়েছে?"
মালিবাগ মোড় থেকে সাধারণত ঢাকা ইউনিভার্সিটি যাবার রাস্তা হচ্ছে, মালিবাগ মোড় - শান্তিনগর - কাকরাইল - সেগুনবাগিচা - প্রেসক্লাব - হাইকোর্ট - দোয়েল চত্বর হয়ে টি.এস.সি মোড়।

কিন্তু ওইদিন রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে তাকে ঘুরতে হয়েছে-
মালিবাগ মোড়  - শান্তিনগর - কাকরাইল - বিজয়নগর - জিরো পয়েন্ট - গুলিস্তান - পুরান ঢাকা - বঙ্গবাজার - ঢাকা মেডিক্যাল - শহীদ মিনার - টি.এস.সি মোড়।


আর অফিসে যাবার দিন যা রিকসার ধর্মঘট ছিল। কারণ হচ্ছে- মালিবাগ মোড় থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত, মালিবাগ থেকে রামপুরা রোড এবং মালিবাগ থেকে মগবাজার হয়ে কাকরাইল পর্যন্ত রাস্তায় রিকসা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। কেন? কেউ জানে না।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত আরোপ করা হয়েছে, যা গতকালের (২৮ মার্চ ২০১১) ধর্মঘট ও রিকসা চালকদের ভাংচুর সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত কোন অপরিবর্তিত আছে। এই রাস্তাগুলোকে হঠাৎ করেই কেন "ভি.আই.পি" রোড করা হল? নাকি জ্যাম কমানোর জন্যই এটা করা হয়েছে? কেউ জানে না।



আমার কথা হচ্ছে, জ্যাম কমানোর জন্য যদি এই সিন্ধান্ত নেয়া হয়, তাহলে ব্যাপারটা খুব বেশি ভালো হয় নি। রাস্তা শুধুমাত্র এক গ্রুপের (যাদের গাড়ী আছে) চলাচলের জন্য নয়। রাস্তা সবার জন্য। এইটা আমাদের দূর্ভাগ্য যে আমাদের শহরে রাস্তা কম, মানুষ বেশি। তাই বলে কি মানুষ রাস্তায় চলাচল করবে না? তাদের চলাচলের একটা বাহন তো দিতে হবে।

এই মুহুর্তে ঢাকা শহরে যে পরিমাণ মানুষ বাস করে তাদের চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক গণপরিবহন নেই। কিছু সংখ্যক রুটে বাস চলাচল করে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। বেশিরভাগ অফিসগামী, বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিগামী ছেলে-মেয়েদের জন্য রিকসা একমাত্র ভরসা। যাদের এখন মাথায় হাত!

আমি এখানে সরাসরি রিকসার সাপোর্টে অথবা বিপক্ষেও কিছু বলছি না। আমি কথা বলছি গণপরিবহন নিয়ে। যেখানে এতসংখ্যক মানুষ (সঠিক পরিসংখ্যান আমার জানা নাই) যে বাহন ব্যবহারে নিত্য কাজ সম্পাদন করে, তাদের কাছ থেকে কেন বাহনটি ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে? তাদের জন্য কি কোন বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে? হয়ে থাকলে সেটা কেন তাদের জানানো হয় নি?



একটা নিয়ম বানানো খুবই সহজ। কিন্তু সেটার বাস্তবায়নে দেখা যায় যত ঝামেলা। যে কারণেই আমাদের দেশে বেশিরভাগ ব্যাপারে আইন আছে কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। একটা নিয়ম করার সময় এটার সাথে যাদের ভাগ্য জড়িত তাদের সাথে কোনরকম আলোচনা ছাড়াই এই নিয়ম কেন করা হল?

রাস্তায় সবাই চলাচল করবে। শুধু যদি চার চাকার বাহন চলাচল করে, তাহলে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন পর্যাপ্ত সংখ্যক চার চাকার বাহন গনমানুষের জন্যও থাকে। আমি কথা বলছি পাবলিক ট্রান্সপোর্টের, মানে বাস অথবা ট্যাক্সি, সি.এন.জি.।

জ্যামের দোহাই দিয়ে রাস্তায় চলাচল বন্ধ করা তো কোন সমাধান হতে পারে না। বরঞ্চ আমাদের দেখতে হবে কিভাবে আমরা আমাদের রাস্তাগুলো পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারি এবং নতুন নতুন রাস্তা করতে পারি।

- রেজওয়ান
যোগাযোগঃ rezwaneye2000@gmail.com

No comments:

Post a Comment