Sunday, August 6, 2017

রাতের ট্রেন!

ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন, কমলাপুর।
রাত ১০ঃ৩০ মিনিট

ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষা! অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষে ট্রেনের হুইসেল বাজিয়ে যাত্রা শুরু...

ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগ-মুহূর্তে আমার পাশের সিটের কিছু যাত্রী উঠলেন, বাসা-বাড়ির তৈজসপত্র নিয়ে দুই জোড়া বয়স্ক দম্পতি, আর তাদের সাথেই ছিলেন তাদের সন্তানেরা। বোধকরি নিজের বাড়িই যাচ্ছিলেন, বেশ কিছু সময়ের জন্য। অনেকটা সময় নিয়ে জিনিস্পত্র গুছিয়ে উঠে তারপর সবাই মিলে দিলেন এক ঘুম। রাতের ট্রেনের ভিতরে সব বাতি নিভিয়ে দেয়া হয় না, বেশ কিছু জ্বলতেই থাকে। এর মাঝেই বৃদ্ধ দম্পতির একজন (মনে হয় বসার সমস্যা হচ্ছিল) প্রায় পুরোটা সময় মোটামুটি হেলান না দিয়ে খাড়াভাবে বসে থেকেছেন। ঘুমোতেও বোধকরি তার সমস্যা হচ্ছিল। আর থেকে থেকে মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করছিলেন, যাতে তার অস্বস্তিই প্রকাশ পাচ্ছিল।

ইদানিং ট্রেন জার্নিটা আমার খুব পছন্দের হয়ে উঠেছে! আমাদের দেশের ট্রেনগুলোও বেশ উন্নত হয়েছে এখন। বেশ কিছু নতুন নতুন বগি এসেছে, তাদের ভিতরের ডেকোরেশন খুব সুন্দর, টয়লেটগুলো পরিস্কার আর এসি গুলোও চমৎকার কাজ করে! সবচাইতে যেটা বেশি পছন্দ হয়েছে তা হল জানালাগুলো - বিশাল সুন্দর জানালাগুলো দিয়ে খুব সন্দর দৃশ্য দেখার সুবিধা! আমার কপাল খারাপ, এই ট্রেনে উঠলাম রাতের বেলা! বাইরে তাকিয়ে দেখার কিছুই নেই! মনটাই খারাপ হয়ে গেল এই ভেবে।

ফজরের একটু আগে।
পথিমধ্যে কোথাও ঃ সূর্যোদয়

কি আর করা! ট্রেন কিছুদুর এগুতেই চোখে চলে আসল ঘুম। প্রায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে সারারাত ঘুমের পর ঘুম আমার ভাঙল মোবাইলে বেজে ওঠা ফজরের আজানের এলার্ম-এ। ঘুম ভেঙ্গে নামাযটা সেরে (তখনও পুরোপুরি অন্ধকারটা কাটেনি) জানালার দিকে একটু কাত হয়ে কিছুটা ঝিমুচ্ছিলাম।

কিছু সময় পার না হতেই সকালের আলোর ছটা চোখে পড়ল। বাইরে তাকিয়ে দেখি ধীরে ধীরে রাতের আঁধার কেটে ভোরের আলো দিগন্ত আলোকিত করছে। সেই আঁধারের বিদায়ের দৃশ্য যতটা না করুণ তার চাইতে মধুর হল আলোর আগমনী বার্তা। কি অদ্ভুত সেই দৃশ্য।

সেই মোহ কাটতে না কাটতেই চোখের সামনে ভেসে এল আরেক অপার সৌন্দর্য্যের লীলাখেলা! ভোরের সেই অন্ধকার কাটিয়ে দিয়ে পূর্বাকাশে ভেসে উঠল সকালের প্রথম সূর্য্যের আলো। কি অবাক করা মনোরম সৌন্দর্য্যে ভরা সেই দৃশ্য! আমি অবাক তাকিয়ে রইলাম। নিজের মনেই চিন্তা করতে লাগলাম, প্রতিদিনই তো আমি এই দৃশ্য দেখি, অথচ আজ কেন তা অন্যদিনের মত নয়? এ যেন এই পৃথিবীর কোন দৃশ্য নয়! এ যেন অন্য কোন ভুবনের আলোকচ্ছটা।

নিজের অজান্তেই মনের এক কোণে ভেসে উঠল দুই লাইন কবিতা (নিজের লেখা; তখনও লিখিনি যদিও) । নাহ! এইটা আমার মনের অবচেতন চিন্তা। ভোরের আকাশে দিনের প্রথম সূর্য্যের আলোতে আমি ভেসে চলেছি দুরন্ত এক ট্রেনে করে অজানা কোন এক গন্তব্যে, জানিনা কখন গিয়ে পৌঁছাব, জানিনা আদৌ পৌঁছাব কিনা!

হঠাৎই লক্ষ্য করলাম কখন যেন চোখের কোণ ভিজে গেল আমার। কি অদ্ভুত সুন্দর অপার্থিব দৃশ্য! ট্রেন ছুটে চলেছে সবুজ ধানক্ষেতের মাঝ দিয়ে, মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে সারি সারি বৃক্ষ্যরাজি। কিছুদুর পর পর ফেলে চলেছি একটা একটা করে গ্রাম অথবা গ্রামের বাজার। দূরে দেখা যাচ্ছে সবুজ ক্ষেতের মাঝে উড়ে যাচ্ছে চেনা-অচেনা পাখি আর দূরে দেখা যাচ্ছে ঘন সবুজের সমারোহ। এই সবুজের মাথায় চড়ে বসেছে অদ্ভুত সুন্দর এক আলোকচ্ছটার মুকুট! নীল আকাশের বুক চিরে ঝলমলিয়ে বেরিয়ে আসা সেই আলোকচ্ছটা মূহুর্তেই প্রস্ফুটিত করে দিতে পারে যে কোন প্রাণকে। আকাশে কিঞ্চিৎ মেঘের সমারোহ সেই দৃশ্যকে করে তুলেছে আরও নাটকীয়। আমি ঠিক কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম। নিজেকে আর নিজের মাঝে খুঁজে পেলাম না... আর এই না খুঁজে পাবার মধ্যেও মনের কোন এক কোণে কেন যেন আনন্দ অনুভব হচ্ছিল।

কি যেন এক অদ্ভুত খেয়ালে আমি আমার আশেপাশে কিছু কাগজ খুঁজতে লাগলাম। আমার মনে হল, ঠিক এই মূহুর্তে আমার হাতে যদি একটি কাগজ আর কলম থাকত তাহলে হয়ত রচনা হয়েও যেতে পারত আমার জীবনের প্রথম কোন কবিতা! (ধুর! কি আজব চিন্তা!)

আমাদের কবি-সাহিত্যিকেরা কি এভাবেই রচনা করে ফেলেন বড় বড় গদ্য, সাহিত্য, উপন্যাস!? তারা কি আমাদের এই চিরচেনা, প্রতিদিনের দেখা দৃশ্যগুলোকেই ভিন্নভাবে, ভিন্নচোখে দেখেন? তা নাহলে একই সমাজে একই পরিবেশে বাস করে তাদের পক্ষে কি করে সম্ভব আমাদের থেকে এতটা ভিন্নভাবে চিন্তা করা?

আমার জীবনে আমি বহুবার নিজের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় চেষ্টা করেছি অল্প কিছু লেখার, হোক না তা নিজের ব্যক্তিগত ডাইরির জন্য! অনেক সময় অনেক বড় লেখা লিখেছি, অনেক সময় লিখেছি মাত্র দুই লাইন। কিন্তু যেদিনের বর্ণনা উপরে দিলাম, সেদিন আমার মনের অবস্থাটা ছিল ভিন্ন। কেমন জানি! এই যেমন এখন এতটুকু লিখেই আর লিখতে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু সেদিন আমার হাতে যদি শুধু একটা কলমও থাকত, তাহলে হয়ত আমি হাতের টিস্যুটাতেও কিছু না কিছু লিখে ফেলতাম।

হয়ত সেদিনের মত করে আমার যাত্রাগুলো আমি এর আগে কখনই অনুভব করিনি। আমি হয়ত কখনই মানসিক প্রশান্তিতে সেই মূহুর্তগুলোকে অনুধাবন করতে পারিনি। হয়ত সেদিন একটু বেশি মাত্রায়ই মানসিক প্রশান্তিতে ছিলাম। এমন প্রশান্তি আমি হয়ত এই জীবনে আর কখনও অনুধাবন করিনি। আসলেই আমাদের মনের অবস্থা আমার চিন্তাশক্তিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। আর এই প্রভাবকে কাজে লাগিয়েই হয়ত বড় বড় কবি-সাহিত্যিকদের জন্ম হয়। আর আমার জন্য আপাতত এই লেখাটাই যথেষ্ট!

সেদিনের সেই যাত্রাটা আমার জীবনের স্মরনীয় এক যাত্রা হয়েই থাকবে আমার কাছে।

Thursday, August 3, 2017

সরকারী জিনিস বলে কথা...

সরকারী জিনিসের যে কি হাল হয় তা তো আমাদের সবারই জানা আছে। আমরা আসলে নিজের টাকা দিয়ে কোন কিছু কিনলে শুধু তখনই মায়া করতে জানি, অন্যের কোন কিছুর ব্যাপারে আমাদের এই মায়া কাজ করে না... তবে যদি শুধু মায়া কাজ না করত তাহলেও বোধহয় ভালোই ছিল, কিন্তু আমরা আবার তখন এক ধাপ এগিয়ে যাই... আমরা আবার সেইটা ধ্বংস করার জন্য পিছু লেগে যাই! তাই বলছিলাম যে আমরা আসলে হিংসেপ্রবণ জাতি। নিজেরা যদি উঠতে না পারি তাহলে আরেকজনকে উঠতে সাহায্য তো করবই না বরং তাকে কিভাবে টেনে নিচে নামানো যায় সেই পথ খুঁজে বের করতে তৎপর হয়ে থাকি। আমরা আসলে জাতি হিসেবে সবসময় এমন্টিই ছিলাম, কখনও এর চাইতে ভালো কিছু ছিলাম না। যদি অতীত ইতিহাস অথবা পুরনো ছবি ঘেঁটে দেখা যায়, তাহলেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে।

আমরা আগে থেকেই এইরকম অসভ্য আর অগোছালো জাতি ছিলাম। আগে থেকেই এই রকম নিচু মানের জাতি ছিলাম। আগে থেকেই এই রকম বাজে স্বভাবগুলো ছিল আমাদের। আমরা সবসময় রাস্তার মাঝখান দিয়েই হাঁটতাম, রাস্তার ধার দিয়ে না রেখে গাড়ী অথবা রিকসা রাস্তার মাঝামাঝি দিকে পার্ক করতাম, দেয়ালে বা বড় বিল্ডিংয়ের গায়ে চিকা মারতাম, পথ চলতে কাউকে কোন কাজ করতে দেখতে অথবা সামান্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি দেখতে অথবা শুধুমাত্র কেউ একটা বড় ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে তার দিকেই হা করে আরও দশজন তাকিয়ে থাকতাম।

বস্তি এবং অসভ্য জাতি আমরা। 

Wednesday, February 15, 2017

অদ্ভুত!

অন্ধকার রাতে এলাকার কোন এক জায়গায় আমি কি যেন খুঁজছি! অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে না পেরে আমি হতাশ। এই অবস্থায় কিছুক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে আমি যখন ফিরে আসছি, তখন আমার সাথে আমার কুকুরটাও চলছে। বিশালদেহি, গুরুগম্ভীর দেখতে কুকুরটি আমার সাথে অত্যন্ত দম্ভের সাথে হেঁটে চলেছে। কিছুদূর যেতে না যেতেই আমার আরেকটি কুকুর আমার পাশে এসে দাঁড়ালো, অত্যন্ত মলিন মুখে আমার দিকে তাকিয়ে... আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল! আমি তখন তাকে জড়িয়ে ধরে থামানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা কি করব। তার কান্নার জোরে আমি কাঁপতে শুরু করে দিলাম... ... তার কান্না তো আর থামে না... ...

ঠিক এই সময় আমার মাথায় চিন্তা এল, 'আমার তো কোন কুকুর নেই! এমনকি আমি তো কখনও কুকুর পছন্দও করিনি!'

আর সেই সাথে আমার ঘুমটাও ভেঙ্গে গেল!

তখন প্রায় মাঝরাত। আমি আমার রুমেই শুয়ে আছি। পাশে আমার বউ ঘুমিয়ে।

আমি অন্যপাশ ফিরে আবার ঘুমিয়ে গেলাম।

Thursday, February 9, 2017

দিনকালটা কেমন যেন আজকাল!

সাইকেল নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় আসার পথে গুলশান-১ নম্বর সার্কেলে রাস্তার মাঝখানে এক বয়স্ক ভদ্রলোকের সাথে বার্তালাপ-

আমিঃ আঙ্কেল (ষাটের কাছাকাছি হবে বয়স; দেখে মনে হল) একটু সাইড দিবেন? আমি চলে যাই!
উনিঃ (খুবি রাগান্বিত এবং বিরক্ত চেহারা নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন; কিন্তু কিছু বললেন না)
আমিঃ (আবারও) আঙ্কেল দেখি একটু এগিয়ে যাই।

(আসলে আমি ফুটপাথের সাইড ঘেষে সাইকেল এক পায়ে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিলাম, যেখানে আমার সাইকেল ছিল রাস্তায় আর পা দিয়ে সাপোর্ট দেয়া ছিল ফুটপাথে; কারণ অপর পাশে আড়াআড়ি করে রাখা ৩-৪টা হিউম্যান হলারের কারণে আর বামে চাপা যাচ্ছিল না)

উনিঃ (এইবার মুখ খুললেন) রাস্তা দিয়ে চালান, ফুটপাথে উঠেন কেন?
আমিঃ আমিতো ফুটপাথে উঠি নাই আঙ্কেল, আমিতো রাস্তাতেই আছি! আমি শুধু বললাম যে একটু সাইড দিবেন কিনা!
উনিঃ একে তো রঙ সাইড দিয়ে আসছে, আবার ফুটপাথে এসে গায়ের উপর উঠায় দিচ্ছে... !
আমিঃ আচ্ছা আঙ্কেল, আমিতো আপনাকে সুন্দর করেই বললাম যে ‘আমাকে কি একটু সাইড দেয়া যায়!’, আপনি এত রাগ দেখাচ্ছেন কেন? আর চিল্লাচ্ছেন কেন?!
উনিঃ হ্যা! আবার কথা বলে!

আমিঃ আচ্ছা, আমি কি আপনাকে একবারও বলছি যে আপনি রাস্তায় কেন দাঁড়ায় আছেন! বা অন্য কিছু!?
উনিঃ একে তো রঙ সাইডে আসছে... ... (ব্লা ব্লা ব্লা...)
আমিঃ আমার তো মনে হচ্ছে আপনার কাছে সাইড না চেয়ে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলেই মনে হয় ভালো হইত! তখন আপনি একলা একলাই চিল্লাইতেন, আমার আর এইসব শুনা লাগত না...!
উনিঃ হ্যা! ধাক্কা দিয়েই তো যাবেন! যান ধাক্কা দিয়েই যান! (ব্লা ব্লা ব্লা...)
আমিঃ আচ্ছা সাইডে সরেন, আমি যাই...

(সে সরে দাঁড়ানোর ফলে আমি সাইড হয়ে চলে আসি আর এই পর্যায়ে আমি এগিয়ে যেতে গিয়ে খেয়াল করলাম পিছন থেকে তার একটা লাইনের বক্তব্যের অংশবিশেষ)

উনিঃ হ্যা! পড়ালেখা জানা শিক্ষিত ছেলে হয়ে... ... ... (আর আমি সাইকেল চালিয়ে চলে এলাম)

আজকাল রাস্তাঘাটে আমরা সবাই কেন জানি অনেক হাইপার থাকি! মোটাদাগে এই ব্লেইমটা ‘এই যুগের ছেলেপেলেদের’ ঘারেই এসে পরে... কিন্তু ‘সেই যুগের’ ছেলেপেলেরাও দেখি কম যান না...