Thursday, February 24, 2011

এইটা কি হইল?

আমি সাধারণত ট্রাফিক সিগন্যালে ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দেই না। কারণ আমি জানি যে ঢাকায় এই ধরণের "হট স্পট" নিয়ে কি ব্যবসা হয়। এই স্পটগুলো চড়া দামে ভাড়া হয় এবং কিছু ব্যবসায়ী তা ভাড়া নেয়। তারা সেখানে কিছু ভিক্ষুক নিয়োগ দেয় এবং নিজ গাড়ী বা বাহনযোগে তাদেরকে নির্ধারিত স্থানে নামিয়ে দেয়া হয়। ভিক্ষুকেরা সারাদিন ভিক্ষা করে যা উপার্জন করে তার একটা ভাগ চলে যায় ওইসব ব্যবসায়ীর হাতে। এইটা খুবই প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যবসা। সবাই জানে, কিন্তু কেউ কিছু বলে না। কারণ অনেক বড় বড় "দানব" এর সাথে জড়িত। এর প্রভাব এত বিস্তার করেছে যে, ঢাকার বাইরে থেকে অনেক সময় মানুষ ধরে এনে তাদেরকে জোরপূর্বক পঙ্গু করে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়। এইসব নিয়ে পত্রিকাতেও কম লেখালেখি হয় নাই। তাই আমি সবসময় ট্রাফিক সিগন্যালে ভিক্ষা দেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখি। কারণ এরা তো ব্যবসা করছে, ভিক্ষা না।

কিন্তু আজ সকালে যখন অফিসের দিকে আসছি, তখন রাজারবাগ মোড়ে সিগন্যালে রিকসা দাঁড়াল। কিছুক্ষন পর একটা ভিক্ষুক দেখে আমার আসলেই মনে হল যে একে ভিক্ষা দেয়া যায়। সেই ভিক্ষুকটা আমার সামনের রিকসায় ভিক্ষা করছিল। আমি আগের সব কথা ভুলে গিয়ে যেই ভিক্ষা দেয়ার জন্য মানিব্যাগে হাত দিতে যাব, অমনি দেখি ভিক্ষুকটা আমার দিকে না এসে আমার পেছনে দাঁড়ানো গাড়িটির দিকে ছুটে গেল। আমি হতভম্ব! আমার বলার কিছুই রইল না।

-রেজওয়ান
যোগাযোগঃ rezwaneye2000@gmail.com

Wednesday, February 16, 2011

ছিনতাইকারীর বুদ্ধি!

১৫ই ফেব্রুয়ারী, ২০১১
অফিস থেকে একটু আরলি বের হয়েছিলাম। স্যার তো ছুটিতে ছিলেন, আর তেমন কোন কাজ না থাকায় ৫-৩০ তেই অফিস থেকে বের হয়ে যাই। এখানে বলা বাহুল্য যে, আমার অফিস সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা এবং সরকারি ছুটির দিনেও। যাই হোক, অফিসের সামনে রিকসা না পাওয়ায় একটু হেঁটে গেলাম সামনের দিকে। দিলকুশা মোড় থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত হাঁটতে হল। সেখানে গিয়ে রাস্তা পার হবার জন্য দাঁড়াতেই হঠাৎ দেখি সামনে দৌঁড়াদৌঁড়ি হৈচৈ। আমি একটু ভয় পেলাম। কারণ গত ২ মাস যাবত মতিঝিলে আমরা কিছুদিন পরপরই মারামারি ঢিলাঢিলি দেখছি। অস্থিতিশীল শেয়ার বাজারের কারণে এই দৃশ্য এখন আমাদের চোখে সয়ে গেছে। কিন্তু কখনও সামনাসামনি পরিনি। পরতেও চাই না। তাই একটু হকচকিয়ে গেলাম।

দেখি, কিছু মানুষ দৌঁড়ে গিয়ে আরেকজনকে ধরার চেষ্টা করছে। বুঝলাম, শেয়ার বাজার না। ছিনতাইকারী। খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তারপরও এতটা সামনে থেকে কখনও দেখিনি, তাই আমিও এগিয়ে গেলাম, দেখি কিছু দেখা যায় কিনা! বাস থেকে একজনের মোবাইল টেনে নিয়ে পালাবার চেষ্টা করছিল। রাস্তায় চলাচলকারী আরও বেশ কিছু লোক দৌঁড়ে গেল তাকে ধরতে। বেচারা ছিনতাইকারী! এবার আর যায় কোথা! অল্প একটু দৌঁড়ে গিয়েই ধরা খেয়ে গেল। বাস থেকে লোকটি ছুটে এল। এসেই তার মোবাইল পেয়ে গেল। সে মোবাইল নিয়ে পুলিশের সাথে কথা বলে চলে গেল।

কিন্তু ছিনতাইকারী! সে কোথায়? লোকজনকে মারতে দেখা যাচ্ছে না কেন?

ঘটনার আরও কাছাকাছি গেলাম। দেখলাম সবাই হাসাহাসি করছে। আর প্রশংসা করছে ছিনতাকারীর বুদ্ধির! ছিনতাইকারী পালিয়েছে! পালাই নি, বরং লোকজনই ছেড়ে দিয়েছে! কারণ ধরা খাওয়ার সাথে সাথে ছিনতাইকারী একটা খোলা ড্রেনের ভিতর লাফ দেয়। ড্রেনের পানি গায়ে মেখে একাকার করে ফেলে। এবার তাকে আর কে ধরে! যার মোবাইল, সে তো মোবাইল নিয়ে চলে গেছে। ছিনতাইকারী এবার প্রথমে হেঁটে, পরে দৌঁড়ে পালিয়েছে।

রেজওয়ান
যোগাযোগ- rezwaneye2000@gmail.com

Monday, February 14, 2011

শেয়ার বাজার!

"গতকাল সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে বড় ধরনের দরপতন ও বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভের পর আজও ডিএসইতে দ্রুত গতিতে কমছে সাধারণ মূল্যসূচক। লেনদেনের শুরুর সাত মিনিটের দিকে সাধারণ সূচক ৩৩৩ পয়েন্ট কমে যায়। এর পরও দ্রুত কমতে থাকে সাধারণ সূচক। বেলা সোয়া দুইটার দিকে সাধারণ সূচক ৪৫৭ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ৫৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। প্রায় দুই মাস ধরে সূচক পতনের ফলে ডিএসইতে সাধারণ সূচক ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গেছে। এতে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসে। এ সময়ে মোট ২৪৭ টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে বেড়েছে দুইটির ও কমেছে ২৪৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। মোট লেনদেন হয়েছে ৫৯৩ কোটি টাকার।"


প্রথম আলো, অনলাইন প্রতিবেদক, ১৪-০২-২০১১
সুত্র : http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-02-14/news/131410



বিগত দুই মাসের মুল্য পতনের ধারা অব্যাহত রেখে আজও শেয়ার বাজারে মুল্য সূচক কমেছে ৩৩৩ পয়েন্ট। লেনদেন শুরু হবার মাত্র সাত মিনিটের মাথায়ই ঘটে এই ঘটনা, যা বিগত দুই মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে ৬০০০ পয়েন্টের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই নেমে আসছে সূচক আর রাস্তায় নামছে বিক্ষুদ্ধ বিনিয়োগকারীরা। তারা করছে ভাংচূর, জ্বালাচ্ছে আগুন, দিচ্ছে শ্লোগান মিছিল।

এই হচ্ছে বর্তমানে শেয়ার বাজারের অবস্থা।

এই অবস্থা সম্পর্কে দেশের সর্বোচ্চ পদাধিকারী দুজন মানুষের বক্তব্য শুনলে হিমশিম খেতে হয়। আমি বলছি দেশের প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কথা। তারা লাগাতার এই দরপতনের কারণ হিসেবে যে ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছেন, তাতে তাদের অজ্ঞতাই ফুটে উঠছে। অর্থমন্ত্রীর ক্রমাগত আশ্বাসের পরে বিনিয়োগকারীরা যখনই শেয়ার বাজারের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকায়, তখনই আবার তারা মুল্য পতনের ফলে ধরাশায়ী হয়ে ফেরত আসে। তার মতে, বিনিয়োগকারীদের অজ্ঞতাই এই পতনের মূল কারণ।

আর রয়েছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তার মতে, দেশের বর্তমান এই অবস্থার জন্য দেশের বিরোধী দল দায়ী। তার মতে, বিরোধি দল শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, তারাই দেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী, তারাই আড়িয়াল বিলে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্য দায়ী। প্রধানমন্ত্রী পারলে এটাই বলে দেন যে, দেশের সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ভুমিকম্পের জন্যও বিরোধী দলই দায়ী। তাই-ই যদি হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটা প্রশ্ন, বিরোধী দল ক্ষমতায় না থেকেই যদি এত কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, আপনারা ক্ষমতায় বসে কি তাহলে ভে*** ভাজছেন?

এখানে বলা বাহুল্য যে, আমি কোন রাজনৈতিক দল করি না, অথবা কারও সমর্থনও করি না। আমি একজন সাধারণ জনগণ হিসেবে যে সরকার দেশের জনগণের জন্য ভালো কাজ করবে তার সমর্থন করি। কিন্তু একটা দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা আরও সংযত ও জ্ঞ্যানগর্ভ কিছু বক্তব্য আশা করি। তাদের দুই দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা এবং মনমালিন্য থাকবেই। তাই বলে প্রধানমন্ত্রী এইসব বিষয়ে এই ধরনের মন্তব্য না করলেই পারেন। এইসব কথা বলার জন্য তার দলের অন্য সদস্য আছেন, যাদের মুখে এইসব কথা মানায়; ওনার মুখে নয়।

রেজওয়ান
যোগাযোগ - rezwaneye2000@gmail.com

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১১!

আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের বিষয় যে, বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১১-এর আসর আমাদের দেশে বসছে। শুধু তাই নয়, এর উদ্বোধনী অনুষ্টানের আয়োজক স্বাগতিক বাংলাদেশ। জাতি হিসেবে আজ আমরা গর্বিত। আমাদের এই আনন্দের আজ সীমা নেই।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট-এর এই আয়োজন সফল করতে বাংলাদেশের প্রস্তুতির শেষ নেই। অনেক জল্পনা-কল্পনার পর ঢাকাকে তার পরিপূর্ণ রুপ মাধুরী ফিরিয়ে দিতে আয়োজকদের চেষ্টার কমতি নেই। ঢাকার দুটি স্টেডিয়াম (বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ও শেরে-এ-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম)-কে মেরামত করে সাজানো হয়েছে নতুন জৌলুসে। স্টেডিয়াম ও সংলগ্ন এলাকায় পড়েছে সাজ সাজ রব। সব কিছুতে রঙের ছোঁয়া লেগেছে।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অতিথিদের চলাচলের রাস্তার দুই ধারের কোন বাড়ি পুরনো রঙ-চটা অবস্থায় থাকতে পারবে না। সবাইকে বাড়ি রঙ করতে হবে। বিশেষ করে স্টেডিয়াম ও সংলগ্ন এলাকায়। রাস্তায় গাড়ি চলাচলের ব্যাপারেও রয়েছে কড়াকড়ি। পুরনো গাড়ি রাস্তায় নামতে পারবে না। গণপরিবহনে থাকতে হবে নতুন রঙের ছোঁয়া।

শুধু তা-ই নয়, প্রায় ২-৩ বছর ধরে অবহেলিত ঢাকার রাস্তাঘাট-ও পেয়েছে নতুনত্বের ছোঁয়া। নতুন পিচঢালা পথে লেগেছে নতুন চকচকে সাদা-কালো রোড মার্কিং। ফুটপাত-ও পিছিয়ে নেই এদিক থেকে। তাতেও বসেছে নতুন পেভারস, পেয়েছে রগ্নের ছোঁয়া। বেশিরভাগ রাস্তার ধার থেকে সরে গেছে হকার। রাস্তায় রাস্তায় ঝুলছে না কোন কেবল (তার)। সব মিলিয়ে একেবারে অচেনা এক ঢাকা।

হতেই হবে! বিশ্বকাপ ক্রিকেট-এর মত এইরকম একটা আন্তর্জাতিক মানের আয়োজন সফল করতে আয়োজকদের কাছ থেকে এইটুকুতো আশা করাই যায়। এর উপর আবার এর সাথে আমাদের দেশের ইমেজ জড়িত। সব কিছু মিলিয়ে এইবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেট-এর আমাদের আয়োজন নিয়ে সবাই খুশি।

--------------------------------------------------------------------------------------------------

কিন্তু আমি আসলে এই ব্যাপারে কোন কথা বলতে চাই না। আমি বলতে চাই এর পরবর্তিতে আমাদের অবস্থা কি হবে, তা নিয়ে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট-এর আয়োজন মাস-দুয়েকের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এরপর কি ঢাকা আবার তার পুরনো চেহারায় ফিরে যাবে? সে কি আবারও তার রুপ-জৌলুস হারাবে? কিছু জিনিস হয়ত এমনই থেকে যাবে। যেমন রাস্তায় হয়ত আর তারের (কেবল) জাল দেখা যাবে না। কিন্তু রাস্তায় রাস্তায় আবার হকারদের উৎপাত বেড়ে যাবে, আবার দেখা যাবে রংচটা পুরনো বাস, দেখা যাবে দেয়ালে দেয়ালে অবাঞ্ছিত পোস্টার। বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষ্য নেয়া সব পদক্ষেপ ভেস্তে যাবে তখন। এখনকার মত পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাটও তখন দেখা যাবে না। কিন্তু কেন?

আমরা যদি এত কম সময়ের মধ্যে একটা আয়োজন সফল করার জন্য ঢাকায় এত আমূল পরিবর্তন আনতে পারি, তাহলে কেন আমরা সেটা সারা বছর ধরে রাখতে পারি না? আমাদের কি লোকবলের অভাব? না! আমাদের সদিচ্ছার অভাব।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষ্যে আয়োজকদের আয়োজন অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি চাই যেন পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়ার এই উদ্যোগ সব সময় অব্যাহত থাকে।


রেজওয়ান
যোগাযোগ - rezwaneye2000@gmail.com