Saturday, September 24, 2016

ঘুরে এলাম গোলাপের গ্রাম থেকে...

একদিনেই ঘুরে আসা যায় এইরকম সুন্দর জায়গা ঢাকার আশেপাশে আছে, তা এই গ্রামে না এলে আমি বুঝতাম না। এত্ত সুন্দর একটা গ্রাম, এত্ত শান্তি এর পথেঘাটে চলতে... ইট্‌স জাস্ট আমেইজিং!

পুরোটা গ্রাম জুড়ে শুধু গোলাপের ক্ষেত! এদিকে তাকান, ওদিকে তাকান আর যেদিকেই তাকান না কেন চোখে পড়বে শুধুই গোলাপ! চারপাশ থেকে শত শত - হাজার হাজার - লাখ লাখ গোলাপ আপনার দিকে তাকিয়ে মাথা দুলিয়ে আপনাকে স্বাগত জানাবে তাদের রাজ্যে।


এই গ্রামের সাংবিধানিক নাম - শ্যামপুর, সাদুল্ল্যাপুর, বিরুলিয়া। এটি সাভারে অবস্থিত। তবে এর প্রচলিত নাম - "গোলাপ গ্রাম"। ঢাকাসহ সারাদেশে টকটকে লাল গোলাপ সরবরাহের জন্য বিখ্যাত এই গ্রাম। ঢাকার বাজারের প্রায় ৭০ ভাগ (সোর্সঃবাংলা ট্রিবিউন) গোলাপের চাহিদা মেটায় এই গ্রাম। পুরো গ্রামের ৯০ ভাগ লোকের পেশা গোলাপ চাষ। যার জন্য এই গ্রামে ঘুরতে গিয়ে দেখা গেল কারও বাড়ির উঠান বা চারপাশে সামান্য পরিমাণ জমিও পড়ে নেই, ছোট-বড় সব জায়গাতেই গোলাপ চাষ হচ্ছে। আর রয়েছে অপূর্ব প্রাকৃতিক সব দৃশ্য! রয়েছে দিগন্ত জোড়া ন্যাচারাল ভিউ, প্রাকৃতিক জলাধার আর অত্যন্ত গোছানো একটি গ্রাম।

প্রথম আলো সূত্রে জানা গেল, এই গ্রামটি ঢাকার নবাবদের 'বাইগুন বাড়ি' নামে খ্যাত ছিল, এখানে ছিল নবাবদের সংরক্ষিত শিকার কানন। বাইগুন বাড়িতে নবাবদের একটি প্রাসাদ ছিল। নবাব আহসানউল্লাহ নির্মিত একটি মসজিদ ছিল। এখন সেসবের কিছুই নেই। একটি কাছারি ঘরের কিছু ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। পুরো সাদুল্ল্যাপুর এখনও নবাব এস্টেটের আওতাভুক্ত। তাই এখানকার গ্রামবাসীদের নিজস্ব কোন জায়গা নেই। তারা এস্টেট থেকে ইজারা নিয়ে বাস করছেন আর জমিতে চাষাবাদ করছেন। এক কথায় বলতে গেলে সাদুল্ল্যাপুর একটি ভাড়ার গ্রাম এবং বাংলাদেশে সম্ভবত এটিই একমাত্র এমন গ্রাম।




গোলাপ গ্রামে যাবার দিক নির্দেশনা (গুগল ম্যাপ লিংক)

এই গ্রামে যাবার ম্যাপ আমি উপরের লিংকে দিয়ে দিয়েছি। ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে যেতে হবে মিরপুর দিয়াবাড়ি ঘাটে। বাসে গেলে মিরপুর-১ মাজারের সামনে থেকে আক্রান বাজার পর্যন্ত ছোট ম্যাক্সি ছাড়ে কিছুক্ষণ পরপর। মাত্র ২০ টাকা ভাড়া নিবে আর প্রায় ২০ মিনিট পর নামিয়ে দিবে আক্রান বাজারে। ভাগ্য ভাল থাকলে এই যাত্রাপথে আমাদের মত আপনারও কথা হয়ে যাবে কিছু গোলাপ চাষীর সাথে, যারা আপনার সাথেই ট্রাভেল করবে। এরা খুবই হেল্পফুল মানুষ। আক্রান বাজার থেকে অটো বা ম্যানুয়াল রিক্সা নিতে হবে শ্যামপুর গ্রামে। ভাড়া নিবে ৩০ টাকা। রিক্সাওয়ালাকে বললেই তারা নিয়ে যাবে গোলাপের ক্ষেতের পাশে। আসলে পুরো গ্রামটাই গোলাপের বাগান। যেকোন এক জায়গায় নেমে হাঁটা শুরু করলেই হবে, আশেপাশে শুধু গোলাপ আর গোলাপ।

আরেকভাবে যাওয়া যায় এই গ্রামে - নৌপথে। এই রাস্তাটা ট্রাই করা হয়নি, তবে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় নৌ-রুট টা দেখে আফসোস হচ্ছিল! নৌপথে যাওয়ার জন্য মিরপুর-১ থেকে আসতে হবে মিরপুর দিয়াবাড়ী ঘাটে। এই ঘাট থেকে ৩০ মিনিট পরপর নৌকা ছাড়ে সাদুল্ল্যাপুর বাজারের উদ্দেশ্যে।  জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা। প্রচুর পানি থাকলে যেতে সময় লাগবে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা। আর পানি কম থাকলে সময় লাগবে প্রায় ১ঃ৩০ ঘন্টা।

পুরোটা গ্রাম হেঁটেই দেখা যায়। পিচঢালা রাস্তায় হাঁটতে ভালোই লাগবে। গ্রামের পাশেই বিশাল ন্যাচারাল ঝিল থাকায় সারাক্ষণ প্রচুর বাতাস পেলাম, তাই হাঁটতে খারাপ লাগলো না। এছাড়া রিক্সা নিয়েও রাস্তা দিয়ে ঘুরে দেখা যায়।

(ছবিঃ সংগৃহিত গুগল থেকে)